হাওযা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, KHAMENEI.IR সূত্রে, “অগ্রণী ও শীর্ষস্থানীয় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান” শীর্ষক একটি ধারাবাহিক আলোচনায়, এই নিবন্ধে ইসলামি সভ্যতা প্রতিষ্ঠায় ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (হওযা ইলমিয়া) ভূমিকা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
হাওযা ইলমিয়া বা ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে একটি প্রাচীন ও প্রভাবশালী ধর্মীয়-জ্ঞানতাত্ত্বিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা আসল ফকিহ ও ইসলামবিদদের গঠন করে থাকে। এই প্রতিষ্ঠান নতুন সমস্যার সমাধান এবং মানব জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধর্মীয় মতবাদ তৈরিতে খোলা দরজা যুক্ত ইজতেহাদ (যুক্তির মাধ্যমে ইসলামি বিধান নির্ধারণ) পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে অগ্রসর হয়।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জ্ঞান ও সাংস্কৃতিক কার্যকলাপ ইসলামী সভ্যতা গঠনে অদ্বিতীয় ভূমিকা পালন করে; যদি এই প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রকৃত ভূমিকা পালন করে, তাহলে ইসলামী শাসনব্যবস্থার অন্যান্য কাঠামো ও অংশগুলোও যথাযথভাবে কাজ করতে পারবে।
সভ্যতা: এটি কোন গন্তব্যে পৌঁছানোর অভিযান?
সভ্যতা কী, এ নিয়ে মুসলিম ও পশ্চিমা চিন্তাবিদরা বিভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন, এবং প্রতিটি সংজ্ঞা বিভিন্ন মূল্যবোধ ও জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে নির্মিত। ইসলামী বিপ্লবের নেতা ইতিহাসের বিভিন্ন যুগ পর্যালোচনার সময় জ্ঞানের মানদণ্ডে সভ্যতার উত্থান-পতন বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি সভ্যতার শীর্ষবিন্দুকে বৈজ্ঞানিক শ্রেষ্ঠত্বের সঙ্গে সমানভাবে দেখেছেন এবং বহুবার উল্লেখ করেছেন কীভাবে পশ্চিমারা মুসলমানদের কাছ থেকে জ্ঞান গ্রহণ করে নিজেদের করেছে।
এই দৃষ্টিভঙ্গিতে, জ্ঞান ধর্ম থেকেই উৎসারিত হয় এবং ধর্মের সঙ্গে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের কোনো বিরোধ নেই। জ্ঞান ও ধর্ম একত্রে সভ্যতার ভিত্তি গড়ে। এই দৃষ্টিতে, সভ্যতা মানে হলো শৃঙ্খলাবদ্ধ জ্ঞানভিত্তিক জীবন।
নেতার মতে, “ইসলামী সভ্যতা” হলো এমন একটি সভ্যতা যা একেশ্বরবাদ, মানবিক মর্যাদা, ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা এবং সার্বিক সংগ্রামের উপর প্রতিষ্ঠিত। (১৪০৪/২/১৭ তারিখে ক্বুম ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনঃপ্রতিষ্ঠার শতবার্ষিকীতে পাঠানো বার্তা)
সভ্যতা গঠন ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা
সভ্যতা নির্মাণ তাত্ত্বিক ভিত্তি এবং দর্শন ছাড়া সম্ভব নয়। অনেক সময় খণ্ড খণ্ড কাজও কোনো সুনির্দিষ্ট কাঠামো ছাড়াই আমাদের পিছিয়ে দেয়।
এই দৃষ্টিতে, ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করতে হবে, এবং সভ্যতা গঠনে ভূমিকা রাখতে হলে তাদের উচিত “তত্ত্ব উৎপাদন” ও “বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তার প্ল্যাটফর্ম” তৈরি করা।
ইসলামী বিপ্লবের নেতা কেবল শিক্ষাদানের প্রতিষ্ঠান হিসেবে না দেখে এই প্রতিষ্ঠানকে সমাজিক, রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ভূমিকার কেন্দ্র হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন এবং এটিকে “ইসলামের বিশ্ব বার্তার আলোকে সভ্যতাগত নতুনত্ব ও ভবিষ্যৎ ভাবনার শীর্ষ কেন্দ্র” হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
সভ্যতা গঠনের জন্য “চিন্তা” ও “ধারণা” উৎপাদন অপরিহার্য, কারণ কোনো সভ্যতা চিন্তার ভিত্তি ছাড়া গঠিত হতে পারে না।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও বর্তমান চ্যালেঞ্জ
আজকের দিনে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে নানা প্রশ্ন ও সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে—সংস্কৃতি, অর্থনীতি, সমাজ ইত্যাদি বিষয়েও। এসব সমস্যার সঠিক ও দক্ষ সমাধানের জন্য গভীর অধ্যয়ন ও গবেষণা প্রয়োজন।
নেতার মতে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব হলো ইসলামী বিপ্লবের ভবিষ্যৎ পথচলার জন্য চিন্তাগত ও নীতিগত ‘সফটওয়্যার’ প্রস্তুত করা।
তিনি বলেন: যদি ধর্মীয় জ্ঞানীগণ রাজনীতি, অর্থনীতি, যুদ্ধ-শান্তি, শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন না করেন, তবে সেই শূন্যস্থান পশ্চিমা বা ধর্মহীন চিন্তাধারা পূরণ করবে।
উপসংহার
ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত প্রথমে নতুন ইসলামি সভ্যতার রূপরেখা তৈরি করা এবং তারপর সেই অনুযায়ী নিজেদের বৈশিষ্ট্য ও কাঠামো উন্নত করা। কারণ একমাত্র শক্তিশালী চিন্তাতাত্ত্বিক ভিত্তির উপরেই ইসলামী সভ্যতা গঠনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব।
আপনার কমেন্ট